“আমি আর কত দিন বাঁচবো?”— সময়, অস্তিত্ব আর বেঁচে থাকার অর্থ নিয়ে এক গভীর ভ্রমণ
“আমি আর কত দিন বাঁচবো?”— সময়, অস্তিত্ব আর বেঁচে থাকার অর্থ নিয়ে এক গভীর ভ্রমণ
নিজেকে প্রশ্ন করেছেন কখনো—“আমি আর কত দিন বাঁচবো?” এই গভীর জিজ্ঞাসার ভেতর দিয়ে আমরা খুঁজি জীবনের প্রকৃত অর্থ, সময়ের সীমাবদ্ধতা এবং আত্মার জাগরণ।
এই ব্লগে আমরা আবিষ্কার করবো কীভাবে অনিশ্চয়তার মাঝেও জীবনকে অর্থবহ করে তোলা যায়।
সূচিপত্র (Table of Contents)
- সময়ের মুখোমুখি: কেন আসে এই প্রশ্ন
- মৃত্যুভয় না অস্তিত্বের টানাপোড়েন?
- সময় যখন মুদ্রার এক পিঠ—অপর পিঠে কী?
- “বেঁচে থাকা” বনাম “জীবিত থাকা”: পার্থক্য কোথায়
- আত্মোপলব্ধি ও সৃষ্টিশীলতার মাঝে বেঁচে থাকবার অর্থ
- শেষ নয়—যাত্রার প্রকৃত শুরু
- উপসংহার
সময়ের মুখোমুখি: কেন আসে এই প্রশ্ন
অনেক সময় আমাদের জীবনের কোনো এক নির্জন মুহূর্তে হঠাৎ মনে পড়ে যায়, “আর কত দিন বাঁচবো আমি?”
আলো নিভে এলে, কোলাহল থেমে গেলে কিংবা কোনো হারানো মুখের কথা মনে পড়লে—এই প্রশ্ন বুকের ভেতর ধাক্কা দিয়ে ওঠে।
এটি শুধু মৃত্যুচিন্তা নয়—এটি সময়ের উপলব্ধি, অস্তিত্বের অনিশ্চয়তা, আর জীবনের প্রকৃত মানে খোঁজার প্রাথমিক ধাপ।
এই চিন্তার উদ্ভব হয় তখনই, যখন আমরা অনুভব করি সময় হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
আমরা ব্যস্ত থাকি লক্ষ্য পূরণে, সাফল্য অর্জনে; অথচ একদিন হঠাৎ থমকে যাই, বুঝি—এই সব কিছুই একদিন শেষ হয়ে যাবে।
ঠিক সেদিনই প্রশ্নটা আসে—আমরা কি সত্যিই বেঁচে আছি?
মৃত্যুভয় না অস্তিত্বের টানাপোড়েন?
মৃত্যুর ভয় নয়, আমাদের ভীত করে অপূর্ণতা।
যতদিন না বলা কথা জমে থাকে, যতদিন না লেখা চিঠিগুলো খামে ঢোকে না, ততদিন মৃত্যু নয়—মাঝে মাঝেই আমাদের কষ্ট দেয় অস্তিত্ব।
একজন সৃষ্টিশীল ব্যক্তি মানেই সে জানে, প্রতিটি দিন মানে একটা গল্প, একটা চিত্র, একটা অভিজ্ঞতা।
যখন কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তখন মনে হয়—জীবনের একটা অংশ হারিয়ে গেলো।
এই না-পারাটাই যেন আমাদের টেনে আনে সেই প্রশ্নের মুখোমুখি—আর ক’টা দিন পাবো?
সময় যখন মুদ্রার এক পিঠ—অপর পিঠে কী?
সময়ের এক পিঠে আছে গতি, অপর পিঠে অনুভব।
একদিকে সময় চলে যায়, নিরলসভাবে।
অপরদিকে আমরা চেষ্টা করি কিছু মুহূর্তকে ধরে রাখতে—ছবিতে, লেখায়, কিংবা কারো চোখে।
একটা হাসি, একটা কান্না, একটা ভোরবেলা কিংবা সূর্যাস্ত—এইসবই সময়কে অমর করে রাখে।
জীবন তাই সময়ের ভেতর থেকে অনুভবের সঞ্চয়—যা একদা আমাদের না-থাকার মধ্যেও থেকে যায়।
“বেঁচে থাকা” বনাম “জীবিত থাকা”: পার্থক্য কোথায়
এই দুই শব্দের ফারাকটাই আমাদের জীবনদর্শনের গভীরতম ভিত্তি।
জীবিত থাকা মানে নিঃশ্বাস চলছে, শরীর সচল, তবে মনে হয় কিছু নেই।
বেঁচে থাকা মানে—বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় প্রেমে পড়া, অথবা দুঃখের মাঝে একটি গান শুনে চোখ ভিজে যাওয়া।
যখন কোনো লেখক লেখে, গায়ক গায়, আর তা পড়ে বা শুনে পাঠকেরা নিজের জীবনের প্রতিফলন খুঁজে পায়–
তখন সে লেখক বা গায়ক শুধু জীবিত নয়, সে বেঁচে থাকে তার সার্থকতায়।
এটাই পার্থক্য—কাজে, কথায়, সৃষ্টি ও অনুভবে মানুষ সত্যিকারে “বাঁচে”।
আত্মোপলব্ধি ও সৃষ্টিশীলতার মাঝে বেঁচে থাকবার অর্থ
যখন কেউ ক্যামেরায় ধরে রাখে এক বিমুর্ত আলো ছায়া, অথবা শব্দের মাধ্যমে সজীব করে অনুভবের ফ্রেম—তখন সময় থেমে যায়।
প্রতিটি সৃষ্টিশীল কাজ একেকটা সময়-ঘন বিন্দু; যেন এক চিৎকার; যা বলে—“আমি আছি।”
এভাবেই সময় থামে; সময় দীর্ঘ হয় ।সৃষ্টির সৃষ্টিশীলতার অস্তিত্ব যতক্ষণ টিকে থাকে, আমাদের অস্তিত্বও তার সাথে দীর্ঘ হয় আর তার মাঝে আমরা বেঁচে থাকি সময়কে প্রতিরোধ করে অস্তিত্বের দলিল নিয়ে।
শেষ নয়—যাত্রার প্রকৃত শুরু
“আমি আর কত দিন বাঁচবো?”—এই প্রশ্নের উত্তর কোনো ঘড়ি দিতে পারে না।
তবে প্রতিদিনের সাহসিকতা, ভালোবাসা ও সৃষ্টি দিয়ে আমরা প্রতিটি দিনকে করে তুলতে পারি একেকটা নতুন জন্ম। ইতিহাস সৃষ্টির মাধ্যমে আমরাও সৃষ্টি করতে পারি নিজেদের অমরত্ব।
ভেঙে পড়া দিনে, পিছু হটা ক্ষণে, ভাবতে পারি; শেষ মানে তো অন্ধকার না—শেষ মানে তো নতুন এক আলো, নতুন এক চেতনা,
যেখানে আমি বেঁচে থাকব অন্য কারো হৃদয়ের ভেতর, অন্য কারো অনুপ্রেরণায়।।
যদি প্রতিদিন আমরা নিজের শিল্পে, অনুভবে আর সত্যিতে বাঁচি—তবে প্রশ্নটা আপনাতেই বিলীন হয়ে যাবে।
তখন উত্তর নয়, যাত্রাটাই হয়ে উঠবে চূড়ান্ত আশ্বাস।
উপসংহার
এই লেখাটি শুধু একটি প্রশ্নের অনুসন্ধান নয়—এটি একজন সৃষ্টিশীল প্রাণের ভেতরের নীরব কণ্ঠস্বর।জীবনের সীমিত সময়কে যে সীমাহীন অর্থে রূপ দিতে পারে, সে-ই তো সত্যিকারের শিল্পী, সত্যিকারের পথিক।সার্থক মানুষ।।
যদি আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরো সুন্দর সুন্দর ও প্রয়োজনীয় আর্টিকেল পেতে সব সময় ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট– www.kawminews.com
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url